মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমন
প্রকৃতির সৌন্দর্যের সন্ধানে কক্সবাজার বা সেন্টমার্টিন হয়ত অনেকেই বেশ কয়েকবার ঘুরে এসেছেন। এবার ঘুরে আসুন মহেশখালী দ্বীপ থেকে। দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী একবার গেলে আপনি বার বার যেতে চাইবেন। প্রাকৃতিক রূপের প্রাচুর্যে ভরা এ জায়গাটিতে রয়েছে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের চমৎকার চমৎকার সব মন্দির। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চারিদিকে বিস্তীর্ণ সুনীল সমুদ্রের দিগন্তজোড়া জলরাশি দেখা যায় কেবল মহেশখালী থেকেই। পাহাড়, দ্বীপ আর সাগরের মিলনস্থল এই দ্বীপের চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। দৃষ্টি সীমানায় শুধু সবুজের সমাহার। চির সবুজের এই দ্বীপটির মায়ায় পড়ে যায় এখানে আগত যেকোন পর্যটক।
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলা হল মহেশখালী দ্বীপ। কক্সবাজার থেকে এটি মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে ১৫৫৯ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
মহেশখালী দ্বীপটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগর । কক্সবাজার ও কুতুবদিয়ার ঠিক মাঝখানে এ দ্বীপটির অবস্থান। দ্বীপটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ছোট ছোট লেক বা হ্রদ। আর হ্রদের পাশেই রয়েছে অপরূপ সাজে সজ্জিত নয়নাভিরাম ঝাউবাগান। ঝাউবাগানের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেনই। মহেশখালীর এলোমেলো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি দৃশ্য আপনার চোখ জুড়িয়ে দিবে। উঁচু পাহাড়ি টিলার উপর দাঁড়িয়ে চারদিকে দৃষ্টি মেললে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তাতে বিহ্বল না হয়ে পারা যায় না। ছোট ছোট পাহাড়ি টিলার ওপর নানান গাছগাছালি আর বুনো ঝোপ আপনার মনে দাগ কেটে যাবে।
মহেশখালীর মূল আকর্ষণ হল আদিনাথ মন্দির। এই আদিনাথ মন্দিরটি কয়েকশ’ বছরের পুরনো। মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আদিনাথ মন্দিরে অবশ্যই যাবেন। মন্দিরটি ভূমি থেকে ২০০’শ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ভূমি থেকে ৬৯টি সিঁড়ি অতিক্রম করে উঠে পড়ুন আদিনাথ মন্দিরে। এই মন্দিরের ভেতরেই রয়েছে অষ্টভুজা দুর্গা মন্দির। আদিনাথ মন্দির থেকে আরেকটু সামনেই পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে আরেকটি মন্দির। এটি দেখতেও ভুলবেন না। মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পাখির চোখে মন ভরে দেখতে পাবেন চারপাশের সুনীল সমুদ্র আর আকাশের দিগন্তরেখায় এক হয়ে যাওয়া। এখানে আরো রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির। সোনালী রঙের দু’টি বৌদ্ধ মন্দির দেখতে খুবই সুন্দর। এছাড়া এখানেই রয়েছে ব্রোঞ্জ নির্মিত বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি। মন্দির এলাকায় প্রবেশের আগেই জুতা খুলে রেখে যেতে হবে। এখান থেকে বেরিয়ে সামনেই পড়বে উপজাতীয়দের তৈরি তাঁতবস্ত্রের দোকান। সেখান থেকে কিনে নিতে পারেন পছন্দের তাঁতের কাপড়।
মৈনাক পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে গিয়ে থেমেছে পাকা জেটি। পুরো পথটাই গিয়েছে উপকূলীয় প্যারাবনের ওপর দিয়ে। দুপাশে চোখ জুড়িয়ে দেয়া প্যারাবনের সবুজ আচ্ছাদন। নীরব পড়ন্ত বিকেল। কড়া রোদ পড়ে গিয়ে শেষে মিঠে মিঠে হয়ে আছড়ে পড়ছে উপকূল জুড়ে বিস্তৃত সেই বনে। এ রকম এক মুহূর্তে বন কাঁপিয়ে আকাশে ডানা মেলে শত শত পাখি। শালিক, কাক, চিল আর অচেনা সামুদ্রিক পাখি। এমন দৃশ্য এ দ্বীপের প্রতি ভালোলাগাটা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। চাইলে চরপারা বীচ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। চলতি পথেই দেখতে পাবেন পানের বরজ আর লবণের মাঠ। মহেশখালীর পানের সুনাম রয়েছে সারা বাংলাদেশ ব্যাপী। তাই এখানকার পান খতে একদম ভুলবেন না।
কিভাবে যাবেন:
মহেশখালী যেতে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পারেন স্থলপথ, রেল পথ কিংবা আকাশ পথে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের পথে যে সব এসি বাস চলাচল করে তা হলো- গ্রিন লাইন, নেপচুন, সোহাগ পরিবহন। ভাড়া ৪৮০ থেকে ৫১০ টাকা এবং নন এসি বাসে ভাড়া ৩০০ টাকা। সৌদিয়া, এস আলম, ইউনিক, চ্যালেঞ্জার প্রভৃতি নন এসি বাস চলে কক্সবাজারের পথে।
মহেশখালীতে যাওয়ার পথ দুটি। সড়ক পথে চকরিয়া থেকে বদরখালি হয়ে মহেশখালী অথবা কক্সবাজার থেকে ট্রলার বা স্পিড বোটে। মহেশখালীর মধ্যে সড়ক পথে বদরখালিতে নদীর মতো চ্যানেলের ওপর সেতু তৈরি হয়ে গেছে ফলে এই পথ দিয়ে নৌপথে পাড়ি দেবার দরকার নেই। চকরিয়া হয়ে যাবার পথে চোখে পরবে “মহেশখালী জেটি”। এটি একটি ব্রিজ এবং দৈর্ঘ্যে বেশ লম্বা। এর চারপাশে প্রচুর জলাভূমি আর পেরাবন। যেখানে প্রচুর অতিথি পাখি আসে। এসব দেখে চোখের ক্লান্তি অনেকটাই দুর হয়ে যাবে। আসতে মাত্র দের ঘণ্টা সময় লাগে।
কোথায় থাকবেন:
মহেশখালীতেই থাকার ব্যবস্থা আছে। মহেশখালীতে মোটামুটি ভালো মানের হোটেল হলো ‘হোটেল সি গার্ডেন’। চাইলে কক্সবাজার শহরের কলাতলীতেও থাকতে পারেন। এখানে বেশকিছু ভালোমানের হোটেল আছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল শৈবাল, লাবনী, প্রবাল। এছাড়া বেসরকারি হোটেলগুলো হলো হোটেল সী গাল, হোটেল সী প্যালেস, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, জিয়া গেস্ট হাউজ, সোহাগ গেস্ট হাউজ, গ্রীন অবকাশ রিসোর্ট, নিটল বে রেস্ট হাউজ প্রভৃতি। এসব হোটেলে ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা আছে।
No comments